দোয়েল : বাংলাদেশের গ্রামীণ পাখি


দোয়েল :  বাংলাদেশের গ্রামীণ পাখি Birds,Oriental Magpie Robin,জাতীয় পাখি,পাখি,দোয়েল পাখি,Birds,



আবাস ও পরিবেশ

দোয়েল পাখি বাংলাদেশের জাতীয় পাখি হওয়ার পাশাপাশি এ দেশের প্রকৃতি ও পরিবেশের সঙ্গে অত্যন্ত সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি প্রজাতি। এ পাখি শুধুমাত্র প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে না, বরং পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এদের বাসা তৈরি, খাদ্য সংগ্রহ, এবং প্রাকৃতিক শত্রু থেকে নিজেকে রক্ষা করার কৌশল এদের টিকে থাকার জন্য অত্যন্ত কার্যকর। চলুন দোয়েল পাখির আবাস ও পরিবেশ নিয়ে বিশদে আলোচনা করা যাক।


দোয়েল পাখির প্রাকৃতিক আবাসস্থল

দোয়েল পাখির প্রাকৃতিক আবাসস্থল মূলত গাছপালা ও ঝোপঝাড়ে ঘেরা অঞ্চল। এরা সাধারণত উন্মুক্ত বনাঞ্চল, কৃষি জমি, বাগান এবং শহুরে পার্কে বসবাস করতে পছন্দ করে। গাছের ডাল, খোলা মাটির অংশ, এবং ঝোপের ভেতর দোয়েল পাখির বসবাসের জন্য আদর্শ স্থান।

দক্ষিণ এশিয়ার উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু দোয়েল পাখির জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এ পাখির উপস্থিতি বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড এবং মালয়েশিয়ার মতো দেশগুলোতে দেখা যায়। বিশেষ করে গ্রামীণ পরিবেশে এ পাখি বেশি লক্ষ্য করা যায়, যেখানে খাদ্য এবং বাসস্থান সহজলভ্য।

দোয়েল পাখির আবাসস্থল নির্বাচন অনেকটাই তাদের খাদ্যাভ্যাসের উপর নির্ভর করে। এরা প্রধানত পোকামাকড় খেয়ে থাকে এবং এমন জায়গায় বাস করে যেখানে সহজে পোকামাকড় পাওয়া যায়। বনের ভেতর ছোট ছোট খাল এবং ঝর্ণার পাশে দোয়েল পাখি প্রায়ই দেখা যায়।

দোয়েল :  বাংলাদেশের গ্রামীণ পাখি Birds,Oriental Magpie Robin,জাতীয় পাখি,পাখি,দোয়েল পাখি,Birds,



দোয়েল পাখি বাংলাদেশের কোন এলাকায় বেশি দেখা যায়

বাংলাদেশে দোয়েল পাখি দেশের প্রায় সব অঞ্চলে দেখা যায়, তবে কিছু নির্দিষ্ট এলাকাকে এদের প্রধান আবাসস্থল হিসেবে ধরা হয়। বাংলাদেশের গ্রামীণ এলাকাগুলো দোয়েল পাখির জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। বিশেষ করে সিলেট, রংপুর, চট্টগ্রাম এবং সাভারের মতো এলাকায় এদের উপস্থিতি ব্যাপক।

সিলেট অঞ্চলের চা বাগান এবং পার্শ্ববর্তী বনাঞ্চলে দোয়েল পাখির বসবাস উল্লেখযোগ্য। চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চল এবং কক্সবাজারের আশপাশের বনাঞ্চলও দোয়েল পাখির জন্য আদর্শ। ঢাকা শহরের পার্ক এবং বোটানিক্যাল গার্ডেনের মতো জায়গাগুলোতেও এদের দেখা মেলে।

গ্রামীণ এলাকায় দোয়েল পাখি সহজেই নজরে পড়ে। বিশেষ করে শীতের সকালে এদের মধুর কণ্ঠস্বর গ্রামবাংলার প্রকৃতিকে সজীব করে তোলে। শহরাঞ্চলেও দোয়েল পাখি টিকে আছে, তবে ধীরে ধীরে এর সংখ্যা কমে যাচ্ছে।


দোয়েল পাখির আবাসস্থলের বৈশিষ্ট্য

দোয়েল পাখির আবাসস্থলের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এটি এমন জায়গায় থাকে যেখানে প্রচুর গাছপালা এবং খাদ্য সরবরাহ রয়েছে। এদের বাসস্থান সাধারণত উঁচু গাছের শাখা, ঝোপঝাড়, এবং পুরনো গাছের কোটরে হয়।

দোয়েল পাখি নিরিবিলি এবং শান্ত পরিবেশে থাকতে পছন্দ করে। এদের বাসস্থান সাধারণত মানুষের কোলাহল থেকে দূরে, তবে কিছু ক্ষেত্রে শহুরে এলাকায়ও এরা খাপ খাইয়ে নিতে পারে। বাসা তৈরির জন্য তারা এমন জায়গা বেছে নেয় যা শিকারিদের থেকে সুরক্ষিত এবং আবহাওয়ার প্রতিকূলতা থেকে রক্ষা পায়।

এদের বাসস্থানের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো এটি অনেক সময় গাছের নিচু অংশে বা জমির খুব কাছে হয় না। এর ফলে শিকারি প্রাণীদের থেকে বাসা সুরক্ষিত থাকে।

দোয়েল :  বাংলাদেশের গ্রামীণ পাখি Birds,Oriental Magpie Robin,জাতীয় পাখি,পাখি,দোয়েল পাখি,Birds,



দোয়েল পাখি কী ধরণের পরিবেশে বাঁচে

দোয়েল পাখি এমন পরিবেশে বাঁচে যেখানে প্রচুর গাছপালা, পোকামাকড় এবং নিরাপদ আশ্রয় রয়েছে। তারা উষ্ণ আবহাওয়ায় স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে এবং আর্দ্র পরিবেশে ভালোভাবে টিকে থাকে।

গ্রামীণ এলাকা, বনাঞ্চল, চা বাগান, এবং শহুরে পার্কে এদের বেশি দেখা যায়। দোয়েল পাখি সাধারণত এমন জায়গায় বাস করে যেখানে খাদ্যের অভাব নেই। তবে, বন উজাড় এবং পরিবেশ দূষণের কারণে এদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে।

এরা এমন পরিবেশ পছন্দ করে যেখানে উঁচু গাছ, ঝোপঝাড়, এবং ঝর্ণা বা পানির উৎস থাকে। গ্রীষ্মকালে এরা ছায়াযুক্ত এবং ঠাণ্ডা জায়গায় আশ্রয় নেয়। প্রজনন মৌসুমে দোয়েল পাখি বেশি সক্রিয় থাকে এবং পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে বাসস্থান তৈরি করে।

দোয়েল :  বাংলাদেশের গ্রামীণ পাখি Birds,Oriental Magpie Robin,জাতীয় পাখি,পাখি,দোয়েল পাখি,Birds,



দোয়েল পাখির বাসা তৈরির পদ্ধতি

দোয়েল পাখির বাসা তৈরির পদ্ধতি অত্যন্ত চমকপ্রদ এবং সুপরিকল্পিত। তারা সাধারণত বাসা তৈরি করার জন্য নিরাপদ এবং নিরিবিলি জায়গা খুঁজে নেয়। গাছের কোটর, পুরনো ভবনের দেয়াল, অথবা ঝোপের ভেতর দোয়েল পাখি তাদের বাসা তৈরি করে।

এরা বাসা তৈরিতে ঘাস, শুকনো পাতা, ছোট ডাল, এবং পশম ব্যবহার করে। প্রথমে মাদি দোয়েল পাখি বাসা তৈরির স্থান নির্বাচন করে এবং তারপর পুরুষ পাখি সাহায্য করে। বাসা তৈরি করতে তারা খুবই যত্নবান এবং প্রতিটি উপাদান সঠিকভাবে সাজায়।

বাসা সাধারণত গোলাকার আকৃতির হয় এবং এর ভেতরটা মসৃণ রাখা হয়। মাদি দোয়েল পাখি একবারে ৩-৫টি ডিম পাড়ে এবং ডিম ফুটে ছানা বের হতে প্রায় ১২-১৫ দিন সময় লাগে। বাসা তৈরির সময় এরা খুব সতর্ক থাকে এবং শিকারি প্রাণীদের আক্রমণ থেকে বাসা রক্ষা করে।

দোয়েল :  বাংলাদেশের গ্রামীণ পাখি Birds,Oriental Magpie Robin,জাতীয় পাখি,পাখি,দোয়েল পাখি,Birds,



উপসংহার 

দোয়েল পাখির আবাস এবং পরিবেশ তাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে এ পাখির অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক রয়েছে। এদের প্রাকৃতিক আবাসস্থল সংরক্ষণ এবং পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষার মাধ্যমে আমরা দোয়েল পাখির সংখ্যা বৃদ্ধি করতে পারি। দোয়েল পাখি আমাদের জাতীয় পরিচয়ের অংশ এবং এর টিকে থাকার জন্য আমাদের সকলের সচেতন হওয়া প্রয়োজন। 


Post a Comment

0 Comments